সে প্রায় আড়াই হাজার বছরেরও আগের কথা। সে এক বিশাল নদী। নাম সিন্ধু। আর এর তীরেই গড়ে উঠেছিল এক উন্নত সভ্যতা। সিন্ধু নদের নামানুসারে সেই সভ্যতার নাম দেওয়া হয় সিন্ধু সভ্যতা। আর এই সভ্যতারই প্রধান কেন্দ্র ছিল দুটি। হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারো। দেশ ভাগের পর মহেঞ্জোদারো পাকিস্তানের অংশে পড়ে। আর হরপ্পা সভ্যতার বেশিরভাগ অংশই পড়ে ভারত ভূমিতে। সিন্ধু সভ্যতার কথা উঠলেই মহেঞ্জোদারোর বিখ্যাত স্নানাগারের কথা মনে পড়ে। অথচ পরবর্তীতে এর থেকেও বড় স্নানাগারের হদিশ মিলেছিল আমাদের দেশে। জায়গাটির নাম ধোলাভিরা। রয়েছে গুজরাটে।
বিশালাকার স্নানাগার
গুজরাটের ভুজ জেলা থেকে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ধোলাভিরা হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এর স্থানীয় নাম কোটাডা টিম্বা। ধোলাভিরা ছিল সিন্ধু সভ্যতার বৃহত্তম শহরগুলির মধ্যে একটি। এই স্থানটি প্রথম আবিষ্কার হয় ১৯৬৭ সালে। খনন কাজ শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। ২০১৪ সাল নাগাদ এখানে একটি স্নানাগার আবিষ্কৃত হয়। ইতিহাসবিদদের হিসেব অনুযায়ী, মহেঞ্জোদারোর স্নানাগারের থেকে এটি তিনগুণ বড়। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এটি গঠিত হয় ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে (প্রাক-হরপ্পান) এবং ধারাবাহিকভাবে ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (শেষের হরপ্পান সময়কালের প্রথম দিকের অংশ) পর্যন্ত টিকে ছিল। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় ইতিমধ্যেই নাম লিখিয়েছে এই স্থান।
খনন কাজের ফলে…
নগর পরিকল্পনার এক অসাধারণ উদাহরণ হিসেবে ধোলাভিরা ছিল অনবদ্য। প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও খননকাজের ফলে উঠে এসেছে পশুর হাড়, সোনা, রুপো, পোড়ামাটির অলঙ্কার, মাটি ও ব্রোঞ্জের পাত্র, শিলমোহর, সিন্ধু লিপির সাইনবোর্ড এবং দারুণ সব ভাস্কর্য। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, ধোলাভিরা ছিল দক্ষিণ গুজরাট, সিন্ধু-পঞ্জাব এবং পশ্চিম এশিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
নাগরিক সভ্যতা
প্রাচীন শহরের ছিল তিনটি বিভাগ। দুর্গ, মধ্য শহর এবং নিম্ন শহর। দুর্গে থাকতেন শাসকরা, মধ্য শহরে চলত প্রতিরক্ষার কাজ এবং নিম্ন শহরে বাস করতেন সাধারণ নাগরিকরা। শহরে ছিল নির্দিষ্ট প্রবেশদ্বার। উন্নত রাস্তার পাশে ছিল কূপ। দুর্গ ছিল নগরের সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থান। শহরের জল সংরক্ষণ, পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত উন্নত। শহরের বিশাল জলাধারটি ছিল তিন দিক উন্মুক্ত। সেখানে বৃষ্টি এবং নদীর জল বিশুদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হত।
আরও নিদর্শন
ধোলাভিরা ছাড়াও গুজরাটের লোথাল, রাজস্থানের কালিবঙ্গন, হরিয়ানার রাখিগারহি, উত্তরপ্রদেশের আলমগীরপুর, হরিয়ানার বালু, ফরমানা, রাজস্থানের বারোর এবং গুজরাটের দ্বারকা ও ভাগরতরভে হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে।
কচ্ছের রণধোলাভিরা গিয়ে কচ্ছের রণে ঢুঁ না দিলে বেড়ানো অসম্পূর্ণ থাকবে। পূর্ণিমার রাতে এখানকার সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ে। কচ্ছ উৎসবের সময় এখানে জড়ো হন দেশ বিদেশের পর্যটকরা। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই উৎসব চলে।