‘গরম লাগে তো তিব্বত গেলেই পারো।’ আমি বললাম, ‘কিন্তু বললেই তো আর যাওয়া যায় না ?’
বিড়াল বলল, ‘কেন ? সে আর মুশকিল কী?’
আমি বললাম, ‘কী করে যেতে হয় তুমি জানো ?’
বিড়াল একগাল হেসে বলল, ‘তা আর জানিনে ? কলকেতা, ডায়মন্ড হারবার, রানাঘাট, তিব্বত- ব্যাস! সিধে রাস্তা, সওয়া ঘণ্টার পথ, গেলেই হল ।’
সুকুমার রায়ের হযবরল-এর রুমালরূপী বিড়ালের কথাকে যাঁরা নিছক আবোল তাবোল বলে উড়িয়ে দেন, তাঁরা বিশ্ব নিন্দুক। তাঁরা হয়কে নয় করতে পারে। বিড়াল বলেছিল কলকাতা থেকে রানাঘাট গিয়ে সেখান থেকে ডায়মন্ডহারবার হয়ে সোজা তিব্বত যাওয়া যায়। অতটা না হলেও, কলকাতা থেকে দিঘা আর পুরী হয়ে তিব্বত তো অনায়াসেই যেতে পারবেন যে কেউ। পারবে নাই বা কেন? সেই তিব্বত তো আর চিন দেশ দখল করে রাখেনি। পাসপোর্টও লাগবে না। আসলে সেই তিব্বতটি আছে আমাদেরই প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশাতে। তবে ঠিক তিব্বত নয় এই জায়গাটিকে বলা হয় মিনি তিব্বত।
তিব্বতে গেলেই হল…
ওড়িশার গজপতি জেলার চন্দ্রগিরি নামের এক ঘন সবুজ উপত্যকাকে লোকে ভালোবেসে বলে মিনি তিব্বত। জায়গাটির আর এক নাম জিরাং। এখানকার আশপাশ দেখলে ও লোকজনের সঙ্গে কথা বললেই মনে হবে তিব্বতে এসে পড়েছেন। এখানকার প্রাকৃতিক শোভা নিজের চোখে না দেখলে মিস করবেন। নদী, পাহাড়, পর্বতশৃঙ্গ, ঝরনা, আর প্রচুর গাছপালা নিয়ে সেজেগুলে সর্বদা তৈরি থাকে জিরাং। জিরাংয়ের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি তিব্বতি জনগোষ্ঠীর। রাস্তাঘাটের অনেক লোকই নজরে আসবে তিব্বতি পোশাকে।
ঘুরে দেখুন তিব্বত
চন্দ্রগিরিতে রয়েছে একাধিক ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার। স্থানীয়দের কাছে এই বৌদ্ধ বিহারগুলি অত্যন্ত পবিত্র। চন্দ্রগিরি বৌদ্ধ মঠের ভিতরে ভগবান বুদ্ধের প্রায় ২৩ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। মঠের চারপাশের রাস্তাগুলি অত্যন্ত মনোরম। চারদিকে সবুজে মোড়া পাহাড়। দূর থেকে চোখে পড়বে পূর্বঘাট পর্বতমালা। মঠ থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে রয়েছে খাসাদা জলপ্রপাত। ছোট হলেও তার রূপের কোনও তুলনা হয় না। চন্দ্রগিরির সবচেয়ে বিখ্যাত পর্বত মহেন্দ্রগিরি ওড়িশার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। পৌরাণিক কিংবদন্তি অনুসারে ভগবান পরশুরাম মহেন্দ্রগিরি পর্বতে ধ্যান করতেন।
খুদে তিব্বতের ইতিহাস
খুদে তিব্বতের কাহিনি শুরু হয় ১৯৬০-এর দশকে। ১৯৫৯ সালে তিব্বতে চিনা আক্রমণের পরে নির্বাসিত দলাই লামা আশ্রয় নেন ভারতে। আর তাঁর সঙ্গে চলে আসেন হাজার হাজার তিব্বতি শরণার্থী। ভারত সরকারের পুনর্বাসন কর্মসূচি অনুযায়ী, সেই সময় আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি শিবির স্থাপিত হয়েছিল। সেখানেই আশ্রয় নিয়েছিলেন শরণার্থীরা। সেগুলির মধ্যেই একটি ওড়িশার চন্দ্রগিরি বা জিরাং।
কীভাবে পৌঁছবেন চন্দ্রগিরি চন্দ্রগিরির নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল বেরহামপুর রেল স্টেশন। হাওড়া-চেন্নাই রেল রুটের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন এটি। সেখান থেকে ক্যাবে করে সোজা চলে যান চন্দ্রগিরি।